লজ্জা—নারীর অলঙ্কার, শালীনতা—তার রক্ষাকবচ। ইসলামের বিধানে নারীর পর্দা শুধু বাহ্যিকতা নয়, বরং আত্মার পবিত্রতারও প্রতীক। খলিফায়ে রাশেদিনের যুগে পর্দাহীনতা ছিল অপরাধ, যার শাস্তি ছিল কঠোর। সেই শাসনে দেহ বিক্রয়ে লিপ্ত নারীদের জন্য ছিল পাথর নিক্ষেপের বিধান। অথচ সময়ের প্রবাহে আজ আমাদের সমাজ এমন এক স্রোতের দিকে এগোচ্ছে, যেখানে নারী নিজেই তার চরিত্র হননের দায় স্বীকার করে নিচ্ছে জনসমক্ষে।
নরসিংদীর এক নিভৃত কোণ থেকে উঠে এসেছে এমনই এক ব্যতিক্রমী চরিত্র—শারমিন রেজোয়ানা ইভা (বয়স ৩৬)। পেশায় তিনি একজন সহকারী শিক্ষিকা হলেও, সমাজ তাকে চিনছে অন্য এক পরিচয়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে তিনি অকপটে স্বীকার করছেন—তিনি বহু পুরুষের সঙ্গে দেহসম্পর্কে জড়িয়েছেন, আবার সেই সম্পর্কের নামেই দায়ের করছেন যৌন হেনস্তা ও ধর্ষণের মামলা।
মাধবদীর আলগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষিকা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। একদিকে তিনি নিজেই প্রকাশ করছেন অশ্লীল ও আপত্তিকর বক্তব্য, অন্যদিকে সম্মানিত পেশাজীবীদের নাম জড়িয়ে করছেন মানহানিকর প্রচার। এমনকি অভিযোগ রয়েছে, এই নারী এক প্রকার চাতুর্যের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অংকের অর্থ আদায় করছেন।
ফেসবুক লাইভ, স্ক্রিনশট, ভিডিও এডিট ও আপত্তিকর মন্তব্য—এই সব মিলিয়ে এক ভয়ঙ্কর সামাজিক অস্ত্র বানিয়ে তুলেছেন নিজেকে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, টাকা না দিলে ধর্ষণ মামলা ঠুকে দিচ্ছেন, আর টাকা পেলে “ক্ষমা প্রার্থনার” লাইভ দিয়ে সেই মামলার সমাপ্তি টানেন।
জেলা শিক্ষা অফিস তার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮-এর ৩৯(১) ধারা অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করেছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও চলমান রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—একজন শিক্ষক যখন হয়ে ওঠেন সমাজের বিভ্রান্তির কারণ, তখন শিক্ষার আশ্রয়েই বা কে শান্তি খুঁজবে?
ফেসবুক ব্যবহার নীতিমালা লঙ্ঘন করে, শিক্ষার পবিত্রতা নষ্ট করে, তিনি যেন নরসিংদীর এক বিষাক্ত উপাখ্যান হয়ে উঠেছেন। স্থানীয় সূত্র মতে, এই নারীর ফাঁদে পা দিয়ে অনেক পরিবার আজ বিপর্যস্ত; বিচ্ছিন্ন হয়েছে সংসার, ধ্বস্ত হয়েছে সামাজিক সম্মান।
পুলিশ সূত্র জানায়, তিনি একাধিক মামলা করেছেন নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের বিরুদ্ধে। আবার, আপস-মীমাংসার পরেও ফের টাকা দাবির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তাঁর কর্মকাণ্ডে ব্যথিত হয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিরঞ্জন কুমার রায় বলেন, “বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” নরসিংদী সদর থানার ওসি এমদাদুল হক এই ঘটনাকে “খুবই দুঃখজনক” আখ্যা দিয়ে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply